গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি।।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত তিন ব্যক্তির মরদেহ দাফনের পাঁচ দিন পর আদালতের নির্দেশে উত্তোলন করা হয়েছে। সোমবার (২১ জুলাই) সকালে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থান ও টুঙ্গিপাড়া কবরস্থান থেকে এই মরদেহ উত্তোলন করা হয়। নিহতরা হলেন—রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানা।
সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১০টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতের কাছে মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করলে বিচারক অনুমোদন দেন। এরপর দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে পৌর কবরস্থান থেকে রমজান ও ইমনের মরদেহ এবং টুঙ্গিপাড়ায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফ দস্তগীরের উপস্থিতিতে সোহেলের মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
নিহতদের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, এটি মামলার তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় বুধবার (১৬ জুলাই), যখন এনসিপি নেতৃবৃন্দের গাড়িবহর গোপালগঞ্জ শহর ত্যাগের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে বিকট সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়। এতে পাঁচজন নিহত হন—দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী, ইমন তালুকদার, সোহেল রানা ও রমজান মুন্সি।
এই ঘটনার পর শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৮০০ থেকে ১৫০০ জন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলাতেই উল্লেখ করা হয় যে, এনসিপির গাড়িবহরে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিলে তাদের ওপরও গুলি চালানো হয়, যার ফলে নিহতরা গুলিবিদ্ধ হন।
এই ঘটনার অন্যতম বিতর্কিত দিক হলো, সংঘর্ষে নিহতদের লাশ প্রথমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন ও সৎকার করা হয়, যা আইনত প্রশ্নবিদ্ধ। তবে পাঁচ দিন পর আদালতের অনুমতিতে মরদেহ উত্তোলন এবং ময়নাতদন্ত আবার শুরু হওয়ায় বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিহতদের পরিবারের অনেকে দাবি করছেন, এই মৃত্যু পরিকল্পিত এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে তারা উচ্চতর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।