১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী দিবসের ভাবনা

প্রকাশ ঘোষ বিধান||

৮ মার্চ আন্তজার্তিক নারী দিবস। ১৯১১ সালে প্রথম বারের মত আন্তজার্তিকভাবে নারী দিবস পালিত হয়। আজকের নারী দিবস এক দিনের অর্জন নয়। উনবিংশ শতক থেকে শুরু হওয়া টানাপড়েন কাটিয়ে নারীর নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার ফসল আজকের আন্তজার্তিক নারী দিবস। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সংক্ষেপে আইডব্লিউডি বলা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় নারী দিবসের ধারণা। লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এখনও সারা পৃথিবীতেই সমাজের বেশির ভাগ জায়গায় লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান রয়েছে। পুরুষরা এখনও বহু ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় সুবিধা ভোগ করেন। আর সেই কারণেই এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বৃপূর্ণ। শিল্প-সাহিত্য-সহ সব ধরনের ক্ষেত্রে এবং সমাজের সমস্ত কাজে মহিলাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এই দিবস। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের স্বীকৃত পায় এবং প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হতে থাকে।

নারী দিবসের পিছনে রয়েছে নারীর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯০৮ সালের নিউইয়র্ক অভিমুখে ১৫ হাজার নারী কাজের সময়, নায্য মজুরি এবং ভোটাধিকার দাবীতে পদযাত্রায় অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক দল এক ডিক্লারেশনের মাধ্যমে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেরুয়ারী প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করে। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সে দেশের নারীরা ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ রবিবার জাতীয় নারী দিবস পালন করে। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে আন্তজার্তিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে নারীর অধিকার আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকার অর্জনের চেষ্টার তাগিদে একটি বিশেষ দিনকে আন্তজার্তিকভাবে নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জার্মান স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির উইম্যান অফিসের প্রধান ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। বিশ্বের ১৭টি দেশের একশর বেশি নারী প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। ১৯১১ সালে কোপেনহেগেনের সম্মেলনের ঘোষনা অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং জাপান প্রথম বারের মত আন্তজার্তিকভাবে ১৯ মার্চ নারী দিবস পালন করে। ১০ লাখের বেশি নারী পুরুষ ঐ দিন র্যালীতে অংশ নেয়। র্যালীতে অংশ নেওয়া নারীরা কাজের সময়, সরকারি চাকুরী অধিকার, ভোট এবং বৈষম্য নিরসনের দাবী তুলে বিক্ষোভ করে। এরপর ২৫ মার্চ নিউইয়র্কের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১৪০ জন নারী কর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এই ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ ও শ্রমিক আইন বিষয়ে সকলের টনক নড়ে। ১৯১৩ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে রাশিয়ার নারীরা ফেব্রুয়ারীর শেষ তারিখ প্রথম আন্তজার্তিক নারী দিবস পালন করে। ১৯১৪ সালে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে নারীরা যুদ্ধবিরোধী এবং নারীমুক্তির দাবীতে র্যালীতে অংশ নেয়। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার নারীরা যুদ্ধে তাদের ২০ লাখ সৈন্য নিহতের প্রতিবাদ জানাতে ফেব্রুয়ারীর শেষ রবিবার রুটি এবং শান্তির দাবীতে ধর্মঘট শুরু করে। সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা স্বত্বেও নারীরা আন্দোলন অব্যহত রাখে। অবশেষে আন্দোলনের মুখে সরকার তাদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং প্রদেশিক সরকার নারীর ভোটাধিকার দিতে সম্মত হয়। গ্রেগ্রোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ছিল ৮ মার্চ। এই দিনটি আন্তজার্তিকভাবে গৃহীত ও চি‎‎ি‎হ্নত হয় নারীর অধিকার অর্জনের দিন হিসাবে। সময়ের সাথে সাথে উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশের অংশ গ্রহনে নারী অর্জন করে শক্তি।

জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অধিকার এবং অংশগ্রহন সমুন্নত ও সহযোগীতা করতে আন্তজার্তিক নারী দিবস পালন করছে। জাতীসংঘের উদ্যোগে ১৯৭৫ সালে পালিত হয় আন্তজার্তিক নারী বছর। বিশ্বের সব দেশ ৮ মার্চ বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রাকে সম্মান জানাতে এগিয়ে আসে এবং নারীর সমতা প্রতিষ্ঠা ও জীবনের সব ক্ষেত্রে রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহনের অঙ্গীকার করে। বিশ্ব্ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। মানুষ হিসাবে নারী-পুরুষের অধিকার ও মর্যদা সমান। জাতীয় পর্যায়ে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নারীদের রয়েছে স্বক্রীয় অংশ গ্রহন। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশে ৫ম বার নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবিলা পেরন, বিশ্বের প্রথম প্রধান মন্ত্রী শ্রীলংকার শ্রীমাভো বন্দরনায়েক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা মন্ত্রী ক্যাথরিন এথেন, বাংলাদেশে প্রথম নারী প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে প্রথম নারী মহিলা বিচারপতি বেগম নাজমুন আরা সুলতানা, বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী সহ নারীরা সরকারি ও বে-সরকারি সংস্থার উচ্চ পদে নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশ বিশাল জনগোষ্ঠির দেশ। আর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। আর্থ সামাজিকভাবে নারীর অবস্থান পুরুষের তুলনায় বেশ অনগ্রসর। তবে প্রায় সকল সূচকেই পিছিয়ে আছে নারী জনগোষ্ঠী। নারীর গৃহকর্মকে অথনৈতিক কাজ বলে তা পুরুষরা স্বীকার করে না। নানা সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নারীকে অথনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখা হয়। দেশে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এ শ্রম শক্তির মধ্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ শ্রমশক্তি ৩ কোটি ৭৮ লাখ আর নারী শ্রমশক্তি ১ কোটি ৬২ লাখ। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি নারী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শ্রমশক্তিতে নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহনের হার এবং শ্রম বাজারে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের বড় ধরনের সূচনা করেছে। শিল্প, শিক্ষা, সেবা, কুটি শিল্প, সামরিক, বে-সামরিক খাতে নারীর উপস্থিতি লক্ষনীয়। দেশের প্রধান শিল্প গার্মেন্টস শিল্প। এ শিল্পে একচ্ছতভাবে নারীদের দ্বারা পরিচালিত। জরিপে দেখা গেছে ৮১ ভাগ নারী এই শিল্পে নিয়োজিত। এ শিল্পে জড়িত নারীরা বেশির ভাগই গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত নারী। তারা একই সাথে গার্মেন্টস শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের দারিদ্র দূর করে দেশের উন্নয়নের ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সহ সেবাখাতেও নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। প্রাইমারী শিক্ষায় মোট শিক্ষকের ৫৮ শতাংশের বেশি নারী। চিকিৎসা খাতে মহিলা ডাক্তার এবং নার্সদের ব্যাপক উপস্থিতি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখে চলেছে। এ ছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরী, অফিস আদালতে নারীদের কর্মসংস্থান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করেছে।

নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব। তাই উন্নয়নের প্রত্যেক ক্ষেত্রে নারীকে পুরষের সমান অংশীদার করতে হবে। নারীরা সাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে পরিবার ও নিজেকে দারিদ্র দশা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হলে দেশ এগিয়ে যাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে। যুগে যুগে নারী জাতি তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যদা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। মানুষ হিসাবে নারী ও পুরুষ সমান। নারীরা আজও বৈষম্যের শিকার। নারীরা তাদের দুর্গতি লাঘব এবং সমাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় ।

লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবন সুন্দর থাকুক

নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী দিবসের ভাবনা

Update Time : ০৫:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

প্রকাশ ঘোষ বিধান||

৮ মার্চ আন্তজার্তিক নারী দিবস। ১৯১১ সালে প্রথম বারের মত আন্তজার্তিকভাবে নারী দিবস পালিত হয়। আজকের নারী দিবস এক দিনের অর্জন নয়। উনবিংশ শতক থেকে শুরু হওয়া টানাপড়েন কাটিয়ে নারীর নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার ফসল আজকের আন্তজার্তিক নারী দিবস। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সংক্ষেপে আইডব্লিউডি বলা হয়ে থাকে। শ্রমিক আন্দোলন থেকেই উদ্ভূত হয় নারী দিবসের ধারণা। লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য এই দিনটি পালিত হয়। এখনও সারা পৃথিবীতেই সমাজের বেশির ভাগ জায়গায় লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান রয়েছে। পুরুষরা এখনও বহু ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় সুবিধা ভোগ করেন। আর সেই কারণেই এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বৃপূর্ণ। শিল্প-সাহিত্য-সহ সব ধরনের ক্ষেত্রে এবং সমাজের সমস্ত কাজে মহিলাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এই দিবস। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের স্বীকৃত পায় এবং প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হতে থাকে।

নারী দিবসের পিছনে রয়েছে নারীর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯০৮ সালের নিউইয়র্ক অভিমুখে ১৫ হাজার নারী কাজের সময়, নায্য মজুরি এবং ভোটাধিকার দাবীতে পদযাত্রায় অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক দল এক ডিক্লারেশনের মাধ্যমে ১৯০৯ সালের ২৮ ফেরুয়ারী প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করে। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সে দেশের নারীরা ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ রবিবার জাতীয় নারী দিবস পালন করে। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে আন্তজার্তিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে নারীর অধিকার আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকার অর্জনের চেষ্টার তাগিদে একটি বিশেষ দিনকে আন্তজার্তিকভাবে নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জার্মান স্যোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির উইম্যান অফিসের প্রধান ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে নারী দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। বিশ্বের ১৭টি দেশের একশর বেশি নারী প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। ১৯১১ সালে কোপেনহেগেনের সম্মেলনের ঘোষনা অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং জাপান প্রথম বারের মত আন্তজার্তিকভাবে ১৯ মার্চ নারী দিবস পালন করে। ১০ লাখের বেশি নারী পুরুষ ঐ দিন র্যালীতে অংশ নেয়। র্যালীতে অংশ নেওয়া নারীরা কাজের সময়, সরকারি চাকুরী অধিকার, ভোট এবং বৈষম্য নিরসনের দাবী তুলে বিক্ষোভ করে। এরপর ২৫ মার্চ নিউইয়র্কের এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১৪০ জন নারী কর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এই ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ ও শ্রমিক আইন বিষয়ে সকলের টনক নড়ে। ১৯১৩ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে রাশিয়ার নারীরা ফেব্রুয়ারীর শেষ তারিখ প্রথম আন্তজার্তিক নারী দিবস পালন করে। ১৯১৪ সালে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে নারীরা যুদ্ধবিরোধী এবং নারীমুক্তির দাবীতে র্যালীতে অংশ নেয়। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার নারীরা যুদ্ধে তাদের ২০ লাখ সৈন্য নিহতের প্রতিবাদ জানাতে ফেব্রুয়ারীর শেষ রবিবার রুটি এবং শান্তির দাবীতে ধর্মঘট শুরু করে। সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা স্বত্বেও নারীরা আন্দোলন অব্যহত রাখে। অবশেষে আন্দোলনের মুখে সরকার তাদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং প্রদেশিক সরকার নারীর ভোটাধিকার দিতে সম্মত হয়। গ্রেগ্রোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ছিল ৮ মার্চ। এই দিনটি আন্তজার্তিকভাবে গৃহীত ও চি‎‎ি‎হ্নত হয় নারীর অধিকার অর্জনের দিন হিসাবে। সময়ের সাথে সাথে উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশের অংশ গ্রহনে নারী অর্জন করে শক্তি।

জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অধিকার এবং অংশগ্রহন সমুন্নত ও সহযোগীতা করতে আন্তজার্তিক নারী দিবস পালন করছে। জাতীসংঘের উদ্যোগে ১৯৭৫ সালে পালিত হয় আন্তজার্তিক নারী বছর। বিশ্বের সব দেশ ৮ মার্চ বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রাকে সম্মান জানাতে এগিয়ে আসে এবং নারীর সমতা প্রতিষ্ঠা ও জীবনের সব ক্ষেত্রে রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহনের অঙ্গীকার করে। বিশ্ব্ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। মানুষ হিসাবে নারী-পুরুষের অধিকার ও মর্যদা সমান। জাতীয় পর্যায়ে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নারীদের রয়েছে স্বক্রীয় অংশ গ্রহন। বিশ্বে বিভিন্ন দেশে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশে ৫ম বার নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবিলা পেরন, বিশ্বের প্রথম প্রধান মন্ত্রী শ্রীলংকার শ্রীমাভো বন্দরনায়েক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা মন্ত্রী ক্যাথরিন এথেন, বাংলাদেশে প্রথম নারী প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে প্রথম নারী মহিলা বিচারপতি বেগম নাজমুন আরা সুলতানা, বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী সহ নারীরা সরকারি ও বে-সরকারি সংস্থার উচ্চ পদে নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশ বিশাল জনগোষ্ঠির দেশ। আর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। আর্থ সামাজিকভাবে নারীর অবস্থান পুরুষের তুলনায় বেশ অনগ্রসর। তবে প্রায় সকল সূচকেই পিছিয়ে আছে নারী জনগোষ্ঠী। নারীর গৃহকর্মকে অথনৈতিক কাজ বলে তা পুরুষরা স্বীকার করে না। নানা সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নারীকে অথনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখা হয়। দেশে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ। এ শ্রম শক্তির মধ্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ শ্রমশক্তি ৩ কোটি ৭৮ লাখ আর নারী শ্রমশক্তি ১ কোটি ৬২ লাখ। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় এক তৃতীয়াংশের কাছাকাছি নারী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শ্রমশক্তিতে নারীর ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহনের হার এবং শ্রম বাজারে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের বড় ধরনের সূচনা করেছে। শিল্প, শিক্ষা, সেবা, কুটি শিল্প, সামরিক, বে-সামরিক খাতে নারীর উপস্থিতি লক্ষনীয়। দেশের প্রধান শিল্প গার্মেন্টস শিল্প। এ শিল্পে একচ্ছতভাবে নারীদের দ্বারা পরিচালিত। জরিপে দেখা গেছে ৮১ ভাগ নারী এই শিল্পে নিয়োজিত। এ শিল্পে জড়িত নারীরা বেশির ভাগই গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত নারী। তারা একই সাথে গার্মেন্টস শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের দারিদ্র দূর করে দেশের উন্নয়নের ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সহ সেবাখাতেও নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। প্রাইমারী শিক্ষায় মোট শিক্ষকের ৫৮ শতাংশের বেশি নারী। চিকিৎসা খাতে মহিলা ডাক্তার এবং নার্সদের ব্যাপক উপস্থিতি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখে চলেছে। এ ছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরী, অফিস আদালতে নারীদের কর্মসংস্থান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করেছে।

নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব। তাই উন্নয়নের প্রত্যেক ক্ষেত্রে নারীকে পুরষের সমান অংশীদার করতে হবে। নারীরা সাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে পরিবার ও নিজেকে দারিদ্র দশা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হলে দেশ এগিয়ে যাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে। যুগে যুগে নারী জাতি তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যদা থেকে বঞ্চিত থেকেছে। মানুষ হিসাবে নারী ও পুরুষ সমান। নারীরা আজও বৈষম্যের শিকার। নারীরা তাদের দুর্গতি লাঘব এবং সমাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় ।

লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট