০১:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোংলায় নানা আয়োজনে কবি রুদ্রের জন্মবার্ষিকী পালন

  • আলী আজীম
  • Update Time : ০৮:৩৭:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৫ Time View

আলী আজীম, মোংলা ।।
শ্রদ্ধা, গান, কবিতা আর আলোচনায় কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠাখালীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রুদ্র স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংসদ চত্বর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রুদ্রের বাড়িতে দোয়া, মিষ্টি বিতরণ এবং সকাল ১০টায় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
রুদ্র স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টামÐলীর সভাপতি মাহামুদ হাসান’র সভাপতিত্বে ও রুদ্র স্মৃতি সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটো’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মোংলা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম শেখ, চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, রামপাল সরকারি কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রুদ্র ছিলেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক। সমাজের সকল বৈষম্য, সা¤প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। বিদ্ধবৃত্তিক আপোষকামিতায় দেশ যখন আকণ্ঠ নিমজ্জিত, সত্য যখন নির্বাসনে এই রকম অস্থির সময়ে রুদ্রকে আমাদের নিজেদের জন্যে, দেশের জন্যে খুব প্রয়োজন ছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন রুদ্র তার কবিতা, গান নিয়ে বেঁচে থাকবেন।
আলোচনা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি করেন রুদ্রের অনুজ সুমেল সারাফাত। রুদ্রের গান পরিবেশন করেন রুদ্রের গড়া সংগঠন অন্তর বাজাও।
স্মরণানুষ্ঠান শেষে রামপাল উপজেলার উন্নয়ন সংস্থা আমাদের গ্রাম-র উদ্যোগে অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সেবা দেওয়ার জন্যে দিনব্যাপী স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালিত হয়। দুই শতাধিক নারী -পুরুষ বিনামূল্যে এ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, মাত্র ৩৫ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবন-সীমায় রুদ্র রচনা করেন সাতটি কাব্যগ্রন্থ-‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র'(১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশথ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ'(১৯৯০)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন।
তার রচিত ও সুরারোপিত ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’- গানটি দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। ১৯৮৭সালে তসলিমা নাসরীনের সাথে বিচ্ছেদের পর মোংলায় বসে তিনি এ গানটি রচনা ও সুরারোপ করেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ইশ্বরগঞ্জ আঠারবাড়িতে শ্যামাপূজা পালিত উৎসবমুখর পরিবেশে

মোংলায় নানা আয়োজনে কবি রুদ্রের জন্মবার্ষিকী পালন

Update Time : ০৮:৩৭:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

আলী আজীম, মোংলা ।।
শ্রদ্ধা, গান, কবিতা আর আলোচনায় কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠাখালীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রুদ্র স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংসদ চত্বর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রুদ্রের বাড়িতে দোয়া, মিষ্টি বিতরণ এবং সকাল ১০টায় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
রুদ্র স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টামÐলীর সভাপতি মাহামুদ হাসান’র সভাপতিত্বে ও রুদ্র স্মৃতি সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটো’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মোংলা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম শেখ, চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, রামপাল সরকারি কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রুদ্র ছিলেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক। সমাজের সকল বৈষম্য, সা¤প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। বিদ্ধবৃত্তিক আপোষকামিতায় দেশ যখন আকণ্ঠ নিমজ্জিত, সত্য যখন নির্বাসনে এই রকম অস্থির সময়ে রুদ্রকে আমাদের নিজেদের জন্যে, দেশের জন্যে খুব প্রয়োজন ছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন রুদ্র তার কবিতা, গান নিয়ে বেঁচে থাকবেন।
আলোচনা শেষে রুদ্রের কবিতা আবৃত্তি করেন রুদ্রের অনুজ সুমেল সারাফাত। রুদ্রের গান পরিবেশন করেন রুদ্রের গড়া সংগঠন অন্তর বাজাও।
স্মরণানুষ্ঠান শেষে রামপাল উপজেলার উন্নয়ন সংস্থা আমাদের গ্রাম-র উদ্যোগে অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সেবা দেওয়ার জন্যে দিনব্যাপী স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালিত হয়। দুই শতাধিক নারী -পুরুষ বিনামূল্যে এ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, মাত্র ৩৫ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবন-সীমায় রুদ্র রচনা করেন সাতটি কাব্যগ্রন্থ-‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র'(১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশথ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ'(১৯৯০)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন।
তার রচিত ও সুরারোপিত ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’- গানটি দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। ১৯৮৭সালে তসলিমা নাসরীনের সাথে বিচ্ছেদের পর মোংলায় বসে তিনি এ গানটি রচনা ও সুরারোপ করেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।