০৩:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোংলায় প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি ঐতিকে

  • আলী আজীম
  • Update Time : ০৬:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
  • ২২৬ Time View

আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি।।

সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে কাউকে শূন্য হাতে পাঠিয়ে দেননি। সমস্যা কিংবা সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি কোনো-না-কোনো প্রতিভার মাধ্যমে মানুষকে পৃথিবীতে ঠিকই পাঠিয়ে থাকেন তিনি। জীবনের সমস্যাগুলোকে তোয়াক্কা না করে নিজের প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কত শত হাজার মানুষ সফলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছেন তা বলা মুশকিল। তেমনি এক তরুণী নিজের সীমাবদ্ধতাকে দূরে সরিয়ে, নিজের প্রতিভা আর পরিশ্রম দিয়ে স্বপ্নযাত্রার পথে এগিয়ে চলছেন প্রতিনিয়ত। আলোকিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছেন তিনি। 
 শৈশবটা অন্য দশজনের মতো ছিল না তার। জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলো হলদিবুনিয়া এলাকার ঐতি রায় (১৫)। তবে এত কিছুর পরও ঐতি দমে যায়নি। সব বাধা জয় করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ‘জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯’ পেয়ে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।
জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছেন। মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।
একমাত্র মেয়েকে তার মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতি লেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে করে এস এসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাশ করেছে। 
উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় তার বাড়ীতে কথা হয় ঐতির বাবা অনুপম রায়ের সাথে। আবেগ আপ্লূত হয়ে বলেন, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে এই রেজাল্ট হবে ভাবতে পারিনি আমি। ছোটবেলা থেকে মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে যতœ করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই। 
ঐতি রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে ঐতির স্কুলে এবং পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এস এসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আমরা প্রচন্ড খুশি, শ্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান তারা। তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় সরকারের কাছে সহযোগিতা চান ঐতির পরিবার।
এবিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 
ঐতি রায়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতির বাবা অনুপম রায় এবং আমি ছোট বেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আমি তাকে বলি আমার স্কুলে (হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) দেও, বাকিটা আমি বুঝব। এরপর ঐতি রায়কে খুব যতœ করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাশে অত্যান্ত মেধাবী ছিল। শিক্ষকেরা সব সময় তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। আজ ঐতি ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘ এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাশ করে আমার এবং স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুন খুশি। ঐতিকে আরও সুযোগ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করবে সে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবন সুন্দর থাকুক

মোংলায় প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি ঐতিকে

Update Time : ০৬:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি।।

সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে কাউকে শূন্য হাতে পাঠিয়ে দেননি। সমস্যা কিংবা সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি কোনো-না-কোনো প্রতিভার মাধ্যমে মানুষকে পৃথিবীতে ঠিকই পাঠিয়ে থাকেন তিনি। জীবনের সমস্যাগুলোকে তোয়াক্কা না করে নিজের প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কত শত হাজার মানুষ সফলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছেন তা বলা মুশকিল। তেমনি এক তরুণী নিজের সীমাবদ্ধতাকে দূরে সরিয়ে, নিজের প্রতিভা আর পরিশ্রম দিয়ে স্বপ্নযাত্রার পথে এগিয়ে চলছেন প্রতিনিয়ত। আলোকিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছেন তিনি। 
 শৈশবটা অন্য দশজনের মতো ছিল না তার। জন্ম থেকেই অন্ধ ছিলো হলদিবুনিয়া এলাকার ঐতি রায় (১৫)। তবে এত কিছুর পরও ঐতি দমে যায়নি। সব বাধা জয় করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ‘জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯’ পেয়ে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।
জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছেন। মায়ের শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।
একমাত্র মেয়েকে তার মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতি লেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে করে এস এসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাশ করেছে। 
উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় তার বাড়ীতে কথা হয় ঐতির বাবা অনুপম রায়ের সাথে। আবেগ আপ্লূত হয়ে বলেন, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে এই রেজাল্ট হবে ভাবতে পারিনি আমি। ছোটবেলা থেকে মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে যতœ করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই। 
ঐতি রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে ঐতির স্কুলে এবং পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এস এসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। আমরা প্রচন্ড খুশি, শ্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান তারা। তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় সরকারের কাছে সহযোগিতা চান ঐতির পরিবার।
এবিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাথে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 
ঐতি রায়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতির বাবা অনুপম রায় এবং আমি ছোট বেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। আমি তাকে বলি আমার স্কুলে (হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) দেও, বাকিটা আমি বুঝব। এরপর ঐতি রায়কে খুব যতœ করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাশে অত্যান্ত মেধাবী ছিল। শিক্ষকেরা সব সময় তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। আজ ঐতি ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘ এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাশ করে আমার এবং স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুন খুশি। ঐতিকে আরও সুযোগ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করবে সে।