সবুজদিন রিপোর্ট ।। বাগেরহাটের মোংলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের ডাকা পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায় এনসিপি’র শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিল। সমাবেশ স্থলে পৌঁছানোর আগেই পৌর শহরের শাহাদাৎ মোড় চত্বরে তাদের উপর আকস্মিক হামলা হয়। শেষ পর্যন্ত সমাবেশ স্থলে না পৌঁছে প্রাণ বাঁচাতে দিক্বিদিক ছুটে রক্ষা পেয়েছেন তারা।
হামলায় এনসিপি’র শ্রমিক সংগঠনের এক নারী নেত্রীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা রাত সাড়ে ৮ টায় মোংলা ত্যাগ করে।
এনসিপি’র শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, জিয়ার সৈনিক, এক হও শ্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুষ্কৃতকারীরা তাদের উপর ন্যাক্কার জনক হামলা চালায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনসিপি’র শ্রমিক উইং মোংলা বন্দরে জাহাজে কর্মরত মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক নিয়ে পূর্ব ঘোষিত শ্রমিক সংঘ চত্বরে (মাঠে) মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের তলবি সাধারণ সভার আয়োজন করে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। কিন্তু এনসিপি’র কেন্দ্রীয় শ্রমিক উইং নেতারা আসতে বিলম্ব করায় পৌনে ৬টায় সমাবেশ স্থালে যাত্রা করলে শ্রমিক সংঘ সংলগ্ন শাহাদাৎ মোড়ে পৌঁছালে তাদের মিছিল ও যাত্রা রোধ করে সেখানে আগ থেকে জড়ো হওয়া শ্রমিকদের একাংশ ও বিএনপি সমর্থিতরা হাঙ্গামায় তখনই ঘটে হামলা ও মারধরের ঘটনা।
এর আগে সোমবার দুপুরে শ্রমিক সংঘ চত্বরে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশস্থল দেখতে গিয়ে এনসিপি’র কেন্দ্রীয় সংগঠক ও শ্রমিক উইং এর স্থানীয় নেতা মো. তিতুমীর সহ ৩ থেকে ৪ জন শ্রমিক হামলা ও মারধরের শিকার হয়। এ ঘটনায় মোংলা বন্দরে শ্রমিক সংগঠন দখল নিয়ে বিএনপি ও এনসিপি মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
এ দিকে মঙ্গলবার দুপুরে মোংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক নেতারা, তারা দাবি করেন পতিত আ.লীগ দোসর চক্র এনসিপির উপর ভর করে মোংলা সমুদ্র বন্দরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। বিগত ১৭ বছর আ.লীগ সমর্থিত শ্রমিক নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের জিম্মি সহ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে এনসিপি সমর্থিত শ্রমিক নেতা তিতুমিরকে আ.লীগের দোসর হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিএনপির এ সংবাদ সম্মেলন ও ঢাকায় এনসিপি’র বিক্ষোভ মিছিল এবং মঙ্গলবার বিকেলে মোংলায় শ্রমিক উইং’এর সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকে শহর জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকাল ৩ থেকে শ্রমিক সংঘ চত্বর ও আশপাশে পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অপরদিকে দুপুর থেকে মোংলা শহরের বিএনপি সমর্থিত শ্রমিকদের একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও মহড়ায় শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাচীর ভেদ করে শ্রমিকদের কোন পক্ষ সভাস্থলে পৌছাতে পারেনি। আর দ্বিধাবিভক্ত শ্রমিকদের হামলা ও পাল্টা হামলায় পণ্ড হয় এনসিপি’র শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশ।
এনসিপি’র শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়কারী মোশারফ হোসেন স্বপন বলেন, বিগত আ.লীগ আমলে বন্দরের শ্রমিক সংগঠন অকার্যকর রেখে সাধারণ শ্রমিকদের উপর জুলুম করা হয়েছিল। এ সংগঠনের নির্বাচন ও তলবি সাধারণ সভায় অতিথি হিসেবে আমরা যোগ দিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা জিয়ার সৈনিক বলে শ্লোগান দিয়ে এ হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে শ্রমকিদের দু’গ্রুপের মধ্যে হামলা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। তবে কেউ লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পৌর শহরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।