০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই হরিণ শিকার

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
ফাঁদসহ নানা কৌশলে সুন্দরবনে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকার করে আসছে চোরা শিকারীরা। এমনকি বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই। এসব হরিণের মাংস আবার বন সংলগ্ন খুলনার দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। হরিণের পাশাপাশি ওই সব শিকারীর কাছ থেকে বেহাই পাচ্ছে না অন্যান্য বণ্য প্রাণীও।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের কোল ঘেষা উপজেলার সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, কালিনগর, কৈলাশগঞ্জ, রামনগর, বানিশান্তা, ঢাংমারী, খেজুরিয়া ও লাউডোব এলাকা রয়েছে। এসব এলাকার চিহ্নিত কয়েকটি হরিণ শিকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ সুন্দরবনে অবাধে ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে আসছে। বনবিভাগের প্রহরিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে অনেক লম্বা ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে। তারপর খুব সহজেই লোকালয়ে নিয়ে আসে ওই চক্রের সদস্যরা। পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে অগ্রিম অর্ডার নেয়া লোকজনের নিকট নগদ ও বাকিতে বিক্রি করছে। তবে দূর্নীতিবাজ দুই একজন কর্মকর্তা এসব কাজে সহযোগিতা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের কাছে হরিনের মাংস ও চামড়াসহ এসব শিকারী চক্রের দুই একজন সদস্য ধরা পড়ে। কোন কোন সদস্য আবার পালিয়েও যায়। এতে কয়েকটি মামলা খেলেও কখনও থেমে নেই হরিণ শিকার। এমনকি জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও জন প্রতিনিধিরা এসকল শিকারী চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে ইচ্ছামত হরিণের মাংসসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকে। ফলে হরিণ শিকার কিছুতেই বন্দো হচ্ছে না বলে এলাকার সচেত মহলের অভিযোগ। এমনিভাবে চোরা শিকারীদের সুন্দরবনে হরিণ নিধন চলতে থাকলে আগামীতে এ চিত্রল মায়াবী হরিণ বিলুপ্ত হতে পারে বলে ওই মহল মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, চিহ্নিত হরিণ শিকারী চক্রের সদস্যরা প্রতি অমাবশ্যা ও পূর্নিমার গোনে বনে ঢুকে ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে থাকে। পরে এলাকায় এনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। এবিষয়ে এলাকার কোন লোক মুখ খুললে এলাকার কথিত প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের রোষানলে বিভিন্ন রকমের হয়রানির স্বীকার হতে হয় তাদের। শুধু হরিণ নয় এসব শিকারীর হাত থেকে সজারুসহ বনের অন্যান্য বণ্যপ্রাণীও বেহাই পায় না। ওই চোরা চক্রের সদস্যদের নামে হরিণ শিকারের একাধিক মামলা থাকলেও তারা বহালতবিয়তে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে জানান।
এবিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ.জেড.এম হাসানুর রহমান বলেন, জুন মাস হতে এ পর্যন্ত ১৩২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া সোর্সের মাধ্যমে খবর নিয়ে চোরা শিকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থাসহ আমাদের টহল অব্যহত আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্দোলনকারীদের সংযত থাকার আহ্বান নেপালের সেনাপ্রধানের

সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই হরিণ শিকার

Update Time : ০৮:৪৯:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
ফাঁদসহ নানা কৌশলে সুন্দরবনে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকার করে আসছে চোরা শিকারীরা। এমনকি বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই। এসব হরিণের মাংস আবার বন সংলগ্ন খুলনার দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। হরিণের পাশাপাশি ওই সব শিকারীর কাছ থেকে বেহাই পাচ্ছে না অন্যান্য বণ্য প্রাণীও।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের কোল ঘেষা উপজেলার সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, কালিনগর, কৈলাশগঞ্জ, রামনগর, বানিশান্তা, ঢাংমারী, খেজুরিয়া ও লাউডোব এলাকা রয়েছে। এসব এলাকার চিহ্নিত কয়েকটি হরিণ শিকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ সুন্দরবনে অবাধে ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে আসছে। বনবিভাগের প্রহরিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে অনেক লম্বা ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে। তারপর খুব সহজেই লোকালয়ে নিয়ে আসে ওই চক্রের সদস্যরা। পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে অগ্রিম অর্ডার নেয়া লোকজনের নিকট নগদ ও বাকিতে বিক্রি করছে। তবে দূর্নীতিবাজ দুই একজন কর্মকর্তা এসব কাজে সহযোগিতা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের কাছে হরিনের মাংস ও চামড়াসহ এসব শিকারী চক্রের দুই একজন সদস্য ধরা পড়ে। কোন কোন সদস্য আবার পালিয়েও যায়। এতে কয়েকটি মামলা খেলেও কখনও থেমে নেই হরিণ শিকার। এমনকি জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস বনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও থেমে নেই। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও জন প্রতিনিধিরা এসকল শিকারী চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে ইচ্ছামত হরিণের মাংসসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকে। ফলে হরিণ শিকার কিছুতেই বন্দো হচ্ছে না বলে এলাকার সচেত মহলের অভিযোগ। এমনিভাবে চোরা শিকারীদের সুন্দরবনে হরিণ নিধন চলতে থাকলে আগামীতে এ চিত্রল মায়াবী হরিণ বিলুপ্ত হতে পারে বলে ওই মহল মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, চিহ্নিত হরিণ শিকারী চক্রের সদস্যরা প্রতি অমাবশ্যা ও পূর্নিমার গোনে বনে ঢুকে ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে থাকে। পরে এলাকায় এনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। এবিষয়ে এলাকার কোন লোক মুখ খুললে এলাকার কথিত প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের রোষানলে বিভিন্ন রকমের হয়রানির স্বীকার হতে হয় তাদের। শুধু হরিণ নয় এসব শিকারীর হাত থেকে সজারুসহ বনের অন্যান্য বণ্যপ্রাণীও বেহাই পায় না। ওই চোরা চক্রের সদস্যদের নামে হরিণ শিকারের একাধিক মামলা থাকলেও তারা বহালতবিয়তে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে জানান।
এবিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ.জেড.এম হাসানুর রহমান বলেন, জুন মাস হতে এ পর্যন্ত ১৩২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া সোর্সের মাধ্যমে খবর নিয়ে চোরা শিকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থাসহ আমাদের টহল অব্যহত আছে।