১২:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমছে ব্যাংকগুলোর

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১২২ Time View

 

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে, এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের হার কমছে। সম্পদ থেকে আয় কমে যাচ্ছে। ঋণ আদায় হ্রাস পাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ তহবিল বা মূলধনের জোগান বাড়াতে পারছে না। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন রাখার হারও কমছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা সবল হতে পারছে না। ক্রমেই দুর্বলতার দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। এর বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আড়াই বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৭ হাজার ২৭০ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বাড়লে এর বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ। খেলাপি হওয়ার আগের ধাপে অর্থাৎ বিশেষ হিসাবে স্থানান্তর হলে ৫ শতাংশ, খেলাপি হওয়ার পর নিুমান হলে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে ৫০ শতাংশ ও মন্দ হিসাবে শ্রেণিকৃত হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। এ কারণে খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশনও রাখতে হয় বেশি। খেলাপির মধ্যে ৮৮ শতাংশই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ। অর্থাৎ মন্দ ঋণ যত প্রভিশন রাখতে হয় তত। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে অর্জিত অর্থ আটকে যাচ্ছে। এগুলো রিজার্ভ তহবিল বা মূলধনে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। আবার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসাবেও দেওয়া যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ যেভাবে বাড়ছে সেভাবে আয় থেকে প্রভিশন করা যাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের হার কমছে। এতে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোতে প্রভিশনের সংরক্ষণের হার ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে আবার সামান্য বেড়ে ৮৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালের জুনে তা আবার কমে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন রাখার চাহিদা ছিল ৬৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায়। আলোচ্য সময়ে চাহিদা বেড়েছে ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ একই সময়ের ব্যবধানে ৬৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রভিশন রাখার পরিমাণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ। ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১২০ কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকায়। ওই সময়ে এ খাতে ঘাটতি বেড়েছে ২১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বা ১৭৯ গুণ। প্রভিশন ঘাটতির সবই সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংক ২০২০ সালে চাহিদার ৫৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রভিশন রাখতে পারছে। বাকি ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ ঘাটতি ছিল। বিশেষায়িত ও বেসরকারি ব্যাংকে চাহিদামতো প্রভিশন ছিল। তবে বিদেশি ব্যাংকের চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি প্রভিশন ছিল। তবে কয়েকটি বেসরকারি ও একটি বিদেশি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

গত জুনে সরকারি ব্যাংকের সংরক্ষণের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে শতভাগ, বেসরকারি ব্যাংকে ৮২ শতাংশ ও বিদেশি ব্যাংকে ১১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রভিশন ছিল। প্রভিশনের হার বাড়লেও খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্তি বাড়ায় এ খাতে ঘাটতি বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। কারণ খেলাপি ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ। এর বিপরীতে যত বেশি প্রভিশন থাকবে ততই ব্যাংকের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়বে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালে ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আয় করে ৭৮ টাকা ২০ পয়সা খরচ করত। ২০২১ সালে ১০০ টাকা আয় করে খরচ করেছে ৭৭ টাকা। ২০২২ সালে ১০০ টাকা করে খরচ করেছে ৭৮ টাকা ৩০ পয়সা। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১০০ টাকা আয় করে খরচ করেছে ৮১ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আয় কমেছে, খরচ বেড়েছে। ফলে মুনাফার হার কমে গেছে। মুনাফা কমায় প্রভিশন ও মূলধন দুটোই কমেছে। কারণ মুনাফা থেকে ওইসব খাতে অর্থ স্থানান্তর করতে হয়। মুনাফা কম যাওয়ার কারণে মূলধন ও প্রভিশন খাতে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী অর্থ স্থানান্তর করতে পারেনি। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা আরও বেড়েছে।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর ১০০ টাকা সম্পদ বা ঋণের বিপরীতে আয় করেছিল ৩০ পয়সা। ২০২১ সালেও আয় একই ছিল। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ পয়সায়। গত জুন পর্যন্ত তা আবার কমে ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। তবে মূলধন থেকে আয় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন থেকে পরিমাণ আয় একেবারেই নগণ্য ও সম্পদ থেকেই সিংহভাগ আয় হয়। ফলে মূলধন থেকে আয় বাড়লেও তার খুব বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না সার্বিক আয়ের ওপর।

২০২০ সালে মোট ঋণের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ খেলাপি ছিল। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের মজুত নেই। ফলে ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে পড়ার মাত্রাও বেড়েছে। মার্চে ৩ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ১৫টি ব্যাংক সমস্যায় পড়ত। গত জুনে তা বেড়ে ২০টিতে দাঁড়িয়েছে।

২০২০ সালে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন একেবারেই নেতিবাচক।

গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানতের অনুপাত ছিল ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়েছে, কিন্তু আমানত কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের অন্যান্য কারণের মধ্যে এটিও একটি। প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকগুলোর ঋণের চেয়ে আমানত বেশি বাড়তে হয়। তা না হলে তারল্য সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে আমানতের চেয়ে ঋণ বাড়ছে বেশি

 

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্দোলনকারীদের সংযত থাকার আহ্বান নেপালের সেনাপ্রধানের

ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমছে ব্যাংকগুলোর

Update Time : ০৫:০০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

 

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে, এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের হার কমছে। সম্পদ থেকে আয় কমে যাচ্ছে। ঋণ আদায় হ্রাস পাচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর নিট আয় কমে যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ তহবিল বা মূলধনের জোগান বাড়াতে পারছে না। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন রাখার হারও কমছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা সবল হতে পারছে না। ক্রমেই দুর্বলতার দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। এর বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আড়াই বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৭ হাজার ২৭০ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বাড়লে এর বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ। খেলাপি হওয়ার আগের ধাপে অর্থাৎ বিশেষ হিসাবে স্থানান্তর হলে ৫ শতাংশ, খেলাপি হওয়ার পর নিুমান হলে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে ৫০ শতাংশ ও মন্দ হিসাবে শ্রেণিকৃত হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। এ কারণে খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশনও রাখতে হয় বেশি। খেলাপির মধ্যে ৮৮ শতাংশই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ। অর্থাৎ মন্দ ঋণ যত প্রভিশন রাখতে হয় তত। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে অর্জিত অর্থ আটকে যাচ্ছে। এগুলো রিজার্ভ তহবিল বা মূলধনে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। আবার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসাবেও দেওয়া যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ যেভাবে বাড়ছে সেভাবে আয় থেকে প্রভিশন করা যাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের হার কমছে। এতে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোতে প্রভিশনের সংরক্ষণের হার ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে আবার সামান্য বেড়ে ৮৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২৩ সালের জুনে তা আবার কমে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন রাখার চাহিদা ছিল ৬৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায়। আলোচ্য সময়ে চাহিদা বেড়েছে ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ একই সময়ের ব্যবধানে ৬৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৯ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রভিশন রাখার পরিমাণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ। ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১২০ কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকায়। ওই সময়ে এ খাতে ঘাটতি বেড়েছে ২১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বা ১৭৯ গুণ। প্রভিশন ঘাটতির সবই সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংক ২০২০ সালে চাহিদার ৫৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রভিশন রাখতে পারছে। বাকি ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ ঘাটতি ছিল। বিশেষায়িত ও বেসরকারি ব্যাংকে চাহিদামতো প্রভিশন ছিল। তবে বিদেশি ব্যাংকের চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি প্রভিশন ছিল। তবে কয়েকটি বেসরকারি ও একটি বিদেশি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

গত জুনে সরকারি ব্যাংকের সংরক্ষণের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে শতভাগ, বেসরকারি ব্যাংকে ৮২ শতাংশ ও বিদেশি ব্যাংকে ১১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রভিশন ছিল। প্রভিশনের হার বাড়লেও খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্তি বাড়ায় এ খাতে ঘাটতি বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। কারণ খেলাপি ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ। এর বিপরীতে যত বেশি প্রভিশন থাকবে ততই ব্যাংকের ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়বে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালে ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আয় করে ৭৮ টাকা ২০ পয়সা খরচ করত। ২০২১ সালে ১০০ টাকা আয় করে খরচ করেছে ৭৭ টাকা। ২০২২ সালে ১০০ টাকা করে খরচ করেছে ৭৮ টাকা ৩০ পয়সা। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১০০ টাকা আয় করে খরচ করেছে ৮১ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আয় কমেছে, খরচ বেড়েছে। ফলে মুনাফার হার কমে গেছে। মুনাফা কমায় প্রভিশন ও মূলধন দুটোই কমেছে। কারণ মুনাফা থেকে ওইসব খাতে অর্থ স্থানান্তর করতে হয়। মুনাফা কম যাওয়ার কারণে মূলধন ও প্রভিশন খাতে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী অর্থ স্থানান্তর করতে পারেনি। ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক দুর্বলতা আরও বেড়েছে।

২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর ১০০ টাকা সম্পদ বা ঋণের বিপরীতে আয় করেছিল ৩০ পয়সা। ২০২১ সালেও আয় একই ছিল। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ পয়সায়। গত জুন পর্যন্ত তা আবার কমে ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। তবে মূলধন থেকে আয় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন থেকে পরিমাণ আয় একেবারেই নগণ্য ও সম্পদ থেকেই সিংহভাগ আয় হয়। ফলে মূলধন থেকে আয় বাড়লেও তার খুব বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না সার্বিক আয়ের ওপর।

২০২০ সালে মোট ঋণের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ খেলাপি ছিল। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের মজুত নেই। ফলে ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে পড়ার মাত্রাও বেড়েছে। মার্চে ৩ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ১৫টি ব্যাংক সমস্যায় পড়ত। গত জুনে তা বেড়ে ২০টিতে দাঁড়িয়েছে।

২০২০ সালে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মূলধন একেবারেই নেতিবাচক।

গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানতের অনুপাত ছিল ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়েছে, কিন্তু আমানত কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের অন্যান্য কারণের মধ্যে এটিও একটি। প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকগুলোর ঋণের চেয়ে আমানত বেশি বাড়তে হয়। তা না হলে তারল্য সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে আমানতের চেয়ে ঋণ বাড়ছে বেশি