০২:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাইকগাছায় পাট চাষিরা পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ
পাইকগাছায় পাটের আঁশ ছাড়ানো, পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা পাটের আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করছে। এলাকার কৃষকরা জলাশয়, ডোবা, নালায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। সার, বীজ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ কম ও অনুকূল আবহাওয়া থকায় পাটের আঁশ ভালো হয়েছে। পাট বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।
মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে প্রতি মন পাট তিন হাজার টাকা থেকে তিন হাজার দুশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাট ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও পাট কেনা শুরু করেছে। তাই ভালো ফলন ও আশানুরুপ দাম পেয়ে কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠেছে। সোনালী আঁশের রঙে ভরে গেছে কৃষকের মন।
উপজেলার পাট চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়। বড় সমস্যা পাট জাগ দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না। পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ শ্রমিক খরচ, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা।
পাটকাঠির প্রচুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় পাট চাষীদের খরচ অনেকাংশে বেচে যাচ্ছে। ছোট ছোট আটি হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানী হিসাবে গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা খুব বেশি। পাটকাঠি দিয়ে সহজে উনুন জ্বালানো যায় ও সহজে রান্না করা যায়। এইজন্য গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা বেশি। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের পাটচাষী কেসমত সরদার জানান, শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় পাটের আবাদের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। তবে পাটকাঠির দাম বেশি হওয়ায় সেটি পুশিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এ বছর পাটের আবাদ হয়েছে ৩৭২ হেক্টর জমিতে। উপকূলের লবনাক্ত পাইকগাছার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়ুলী ও পৌরসভার জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয়, তোষা ও অন্যান্য জাতের পাট রয়েছে। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের পাটচাষী কেসমত সরদার জানান, পাট ও পাটকাটির দাম বেশি হওয়ায় লাভ বেশী হবে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এবার পাটের আঁশ ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ পাট পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। আর তাতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পাটের দাম বেশি পাওয়ায় সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় পাট চাষীরা। পাইকগাছা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ জানান, পাট চাষিরা গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাচ্ছেন। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পাটের সুদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্দোলনকারীদের সংযত থাকার আহ্বান নেপালের সেনাপ্রধানের

পাইকগাছায় পাট চাষিরা পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে

Update Time : ০৬:০০:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ
পাইকগাছায় পাটের আঁশ ছাড়ানো, পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা পাটের আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ করছে। এলাকার কৃষকরা জলাশয়, ডোবা, নালায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। সার, বীজ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ কম ও অনুকূল আবহাওয়া থকায় পাটের আঁশ ভালো হয়েছে। পাট বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।
মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে প্রতি মন পাট তিন হাজার টাকা থেকে তিন হাজার দুশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাট ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও পাট কেনা শুরু করেছে। তাই ভালো ফলন ও আশানুরুপ দাম পেয়ে কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠেছে। সোনালী আঁশের রঙে ভরে গেছে কৃষকের মন।
উপজেলার পাট চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়। বড় সমস্যা পাট জাগ দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না। পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ শ্রমিক খরচ, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা।
পাটকাঠির প্রচুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় পাট চাষীদের খরচ অনেকাংশে বেচে যাচ্ছে। ছোট ছোট আটি হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানী হিসাবে গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা খুব বেশি। পাটকাঠি দিয়ে সহজে উনুন জ্বালানো যায় ও সহজে রান্না করা যায়। এইজন্য গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা বেশি। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের পাটচাষী কেসমত সরদার জানান, শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় পাটের আবাদের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। তবে পাটকাঠির দাম বেশি হওয়ায় সেটি পুশিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এ বছর পাটের আবাদ হয়েছে ৩৭২ হেক্টর জমিতে। উপকূলের লবনাক্ত পাইকগাছার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়ুলী ও পৌরসভার জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয়, তোষা ও অন্যান্য জাতের পাট রয়েছে। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের পাটচাষী কেসমত সরদার জানান, পাট ও পাটকাটির দাম বেশি হওয়ায় লাভ বেশী হবে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এবার পাটের আঁশ ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ পাট পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। আর তাতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। পাটের দাম বেশি পাওয়ায় সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় পাট চাষীরা। পাইকগাছা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ জানান, পাট চাষিরা গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাচ্ছেন। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পাটের সুদিন ধরে রাখা সম্ভব হবে।