০৭:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ে খাবার ও পানির সংকট, লোকালয়ে আসছে হাতি

সবুজদিন রিপোর্ট।।
খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে বন্য হাতি
সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া, অবাধে গাছ নিধন ও পাহাড় কাটাসহ নানা কারণে জামালপুর-শেরপুর জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির সংকট। তাই, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করছে হাতি। বাড়ছে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব। প্রাণীবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের অপরিণামদর্শিতার ফলে তৈরি হয়েছে এ পরিস্থিতি। বনকে হাতির বাসযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
সাধারণত, একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতি দিনে পানি পান করে ৭০ থেকে ২০০ লিটার। গরম আবহাওয়া ও দীর্ঘ পথচলার ক্ষেত্রে বয়সভেদে হাতির দৈনিক প্রয়োজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ লিটার পানি। বিশাল দেহী এই প্রাণী এক দিনে খেতে পারে ১৪০ থেকে ২৭০ কেজি খাবার। এ তালিকায় আছে— ঘাস, পাতা, গাছের ছাল, শিকড়, কলাগাছ, ফল ও বাঁশের কচি কুঁড়ি।
বন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর ও শেরপুর জেলার বালিজুরী রেঞ্জের ৮ হাজার ৩৩০ একর বনভূমিতে হাতি আছে ১২০টি।
বালিজুরী রেঞ্জের পাহাড়ি অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন হাতির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পানির পরিমাণ কমছে। তাই, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে বন্য হাতি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। ফলে, হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জের দিঘলাকোনা এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য জয় দাংগো বলেছেন, “১০-১৫ বছর থেকে হাতি এ এলাকাতে আসে। পাহাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার নেই। আগে বনে কলাগাছ ছিল। আমলকি, হরতকি, বহেরা— এরকম কিছু গাছ ছিল। সে সময় হাতি পাহাড়ের ভেতরেই থেকেছে।”
একই এলাকার রাত্রি দারিং বলেছেন, “প্রাকৃতিক ছোট ঝিড়ি বা ঝর্ণাগুলো বিলুপ্ত হয়েছে। আগে আমলকি, হরতকি, বহেরা গাছ ছিল; সেগুলোও বিলুপ্তির পথে। সেজন্য হাতিগুলো বনে খাবার কম পাচ্ছে। তাই, লোকালয়ে আসছে।”
সাতানি পাড়া গ্রামের শব্দ আলী বলেন, “ওই দিকে খাবার না থাকায় হাতিগুলো আমাদের ফসল নষ্ট করে ফেলছে। হাতির জন্য বন বিভাগ থেকে যদি খাবারের ব্যবস্থা করে দিতো, অনেক ভালো হতো।”
হাতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, সঠিক সময়ে গাছ না জন্মানোসহ নানা কারণে বনে খাদ্য সংকট হচ্ছে।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণীবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকোনুজ্জামান বলেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ে গাছপালা হবে কী করে? পাহাড়ে ঝর্ণাগুলো থাকবে কী করে, যদি বৃষ্টি না হয়। পানি না থাকলে পাহাড়ে গাছ জন্মাবে কীভাবে? এমন কিছু গাছ আছে, যেগুলো হাতি খায়, সেগুলো বৃষ্টির ওপর ডিপেন্ড করে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। খরা হচ্ছে বিভিন্ন দিকে।”
লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে বনকে হাতির বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ।
ময়মনসিংহ বিভাগের বালিজুরী রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেছেন, “বালিজুরী রেঞ্জে প্রায় ১১৫ হেক্টর বনভূমিতে হাতির খাদ্য উপযোগী বাগান সৃজনের কাজ চলছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে হাতিগুলো বনের ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাবে। খাবার পর্যাপ্ত থাকলে মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব অনেক কমবে। পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ থাকে না এখানে। যতদূর জানি, ‘হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বনভূমিতে ৪০টির মতো জলাধার তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে ভয়াবহ সংঘর্ষ: পাকিস্তানি ১২ সেনা ও ১৩ জঙ্গি নিহত

পাহাড়ে খাবার ও পানির সংকট, লোকালয়ে আসছে হাতি

Update Time : ০৭:৪৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সবুজদিন রিপোর্ট।।
খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে বন্য হাতি
সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া, অবাধে গাছ নিধন ও পাহাড় কাটাসহ নানা কারণে জামালপুর-শেরপুর জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির সংকট। তাই, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করছে হাতি। বাড়ছে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব। প্রাণীবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের অপরিণামদর্শিতার ফলে তৈরি হয়েছে এ পরিস্থিতি। বনকে হাতির বাসযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
সাধারণত, একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতি দিনে পানি পান করে ৭০ থেকে ২০০ লিটার। গরম আবহাওয়া ও দীর্ঘ পথচলার ক্ষেত্রে বয়সভেদে হাতির দৈনিক প্রয়োজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ লিটার পানি। বিশাল দেহী এই প্রাণী এক দিনে খেতে পারে ১৪০ থেকে ২৭০ কেজি খাবার। এ তালিকায় আছে— ঘাস, পাতা, গাছের ছাল, শিকড়, কলাগাছ, ফল ও বাঁশের কচি কুঁড়ি।
বন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর ও শেরপুর জেলার বালিজুরী রেঞ্জের ৮ হাজার ৩৩০ একর বনভূমিতে হাতি আছে ১২০টি।
বালিজুরী রেঞ্জের পাহাড়ি অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন হাতির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পানির পরিমাণ কমছে। তাই, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে বন্য হাতি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। ফলে, হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জের দিঘলাকোনা এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য জয় দাংগো বলেছেন, “১০-১৫ বছর থেকে হাতি এ এলাকাতে আসে। পাহাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার নেই। আগে বনে কলাগাছ ছিল। আমলকি, হরতকি, বহেরা— এরকম কিছু গাছ ছিল। সে সময় হাতি পাহাড়ের ভেতরেই থেকেছে।”
একই এলাকার রাত্রি দারিং বলেছেন, “প্রাকৃতিক ছোট ঝিড়ি বা ঝর্ণাগুলো বিলুপ্ত হয়েছে। আগে আমলকি, হরতকি, বহেরা গাছ ছিল; সেগুলোও বিলুপ্তির পথে। সেজন্য হাতিগুলো বনে খাবার কম পাচ্ছে। তাই, লোকালয়ে আসছে।”
সাতানি পাড়া গ্রামের শব্দ আলী বলেন, “ওই দিকে খাবার না থাকায় হাতিগুলো আমাদের ফসল নষ্ট করে ফেলছে। হাতির জন্য বন বিভাগ থেকে যদি খাবারের ব্যবস্থা করে দিতো, অনেক ভালো হতো।”
হাতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, সঠিক সময়ে গাছ না জন্মানোসহ নানা কারণে বনে খাদ্য সংকট হচ্ছে।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণীবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকোনুজ্জামান বলেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ে গাছপালা হবে কী করে? পাহাড়ে ঝর্ণাগুলো থাকবে কী করে, যদি বৃষ্টি না হয়। পানি না থাকলে পাহাড়ে গাছ জন্মাবে কীভাবে? এমন কিছু গাছ আছে, যেগুলো হাতি খায়, সেগুলো বৃষ্টির ওপর ডিপেন্ড করে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। খরা হচ্ছে বিভিন্ন দিকে।”
লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে বনকে হাতির বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ।
ময়মনসিংহ বিভাগের বালিজুরী রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেছেন, “বালিজুরী রেঞ্জে প্রায় ১১৫ হেক্টর বনভূমিতে হাতির খাদ্য উপযোগী বাগান সৃজনের কাজ চলছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে হাতিগুলো বনের ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাবে। খাবার পর্যাপ্ত থাকলে মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব অনেক কমবে। পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ থাকে না এখানে। যতদূর জানি, ‘হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বনভূমিতে ৪০টির মতো জলাধার তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।”