০৭:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড়, যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে

সবুজদিন রিপোর্ট।।
বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রস্তাব ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন বাজেটে জনবান্ধব দিকটি তুলে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এর আগে সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিছু কর কাঠামোর পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়ে যায়, ফলে তার প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করে।
যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে:
১. তরল দুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিন:
প্যাকেটজাত তরল দুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিছুটা সস্তা হতে পারে।

২. চিনি:
পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টনে ৫০০ টাকা কমিয়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চিনির পাইকারি দাম কমে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে।

৩. কম্পিউটার মনিটর:
২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইন্টারেকটিভ মনিটরও এ তালিকায় যুক্ত। এর ফলে বড় আকারের মনিটরের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. বলপয়েন্ট কলম:
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বলপয়েন্ট কলমে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও সহজলভ্য হবে।

৫. আইসক্রিম:
বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলেও এবার তা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে আইসক্রিমের দাম কমে যেতে পারে।

৬. বিদেশি মাছ ও মাংস:
স্যামন ও টুনার মতো বিদেশি মাছ এবং বিদেশি মাংসের ওপর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে উচ্চবিত্ত ও অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ব্যবহৃত এসব খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে।

৭. বিদেশি পোশাক ও জুতা:
পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিদেশি পোশাক ও স্যান্ডেলের ওপর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে বিলাসপণ্যের এই খাতে কিছুটা মূল্যছাড় আসতে পারে।

৮. বিদেশি প্লাস্টিক তৈজসপত্র:
বিদেশি প্লাস্টিক সামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

৯. বাটার:
বাটার আমদানিতে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, ফলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

১০. ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি, ই-বাইক:
ব্যবহারবান্ধব পরিবহন খাতের উন্নয়নে ইলেকট্রিক গাড়ি ও ই-বাইকের ওপর ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে আইসিইউসহ সব অ্যাম্বুলেন্স, ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়িতে ভ্যাট অব্যাহতির ঘোষণা এসেছে।

১১. বাস ও মাইক্রোবাস:
১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস এবং ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাসে শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা পরিবহন খাতে দাম কমার ইঙ্গিত দেয়।

১২. টায়ার:
টায়ার উৎপাদনের কাঁচামালের শুল্ক কমানো হয়েছে, যার ফলে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কমতে পারে।

১৩. কৃষি যন্ত্রপাতি:
কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির কাঁচামালে শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে কৃষিজ খাতে ব্যয় হ্রাস পাবে।

১৪. ক্যান্সারের ওষুধ:
ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট কাঁচামালে শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা রোগীদের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে আনবে।

১৫. কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি:
কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে সংরক্ষণ খরচ কমে কৃষিপণ্যের দামও স্থিতিশীল থাকতে পারে।

১৬. তৈজসপত্র:
পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট ও বাটি, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র এবং টেক্সটাইল গ্রেড ডেট চিপস তৈরিতে ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

১৭. পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও এলএনজি:
পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য তুলে দেওয়া এবং এলএনজির ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব জ্বালানি বাজারে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৮. ব্যাংকে টাকা জমা:
ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের সীমা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। এর ফলে ছোট-মাঝারি সঞ্চয়কারীদের জন্য ব্যাংকে টাকা রাখা আরও লাভজনক হবে।

বাজেট বাস্তবায়নের পটভূমি
জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বাস্তবতা পাল্টে যাওয়ায় এবারের বাজেট সংসদের বাইরে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস করা হবে এবং ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর কার্যকর হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সুফল ভোক্তা ও উৎপাদনকারী উভয় পক্ষই পেতে পারে। তবে বাস্তবে দাম কমাতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়াতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্দোলনকারীদের সংযত থাকার আহ্বান নেপালের সেনাপ্রধানের

প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড়, যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে

Update Time : ১২:১৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

সবুজদিন রিপোর্ট।।
বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রস্তাব ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন বাজেটে জনবান্ধব দিকটি তুলে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এর আগে সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিছু কর কাঠামোর পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়ে যায়, ফলে তার প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করে।
যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে:
১. তরল দুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিন:
প্যাকেটজাত তরল দুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিছুটা সস্তা হতে পারে।

২. চিনি:
পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টনে ৫০০ টাকা কমিয়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চিনির পাইকারি দাম কমে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে।

৩. কম্পিউটার মনিটর:
২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইন্টারেকটিভ মনিটরও এ তালিকায় যুক্ত। এর ফলে বড় আকারের মনিটরের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. বলপয়েন্ট কলম:
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বলপয়েন্ট কলমে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও সহজলভ্য হবে।

৫. আইসক্রিম:
বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলেও এবার তা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে আইসক্রিমের দাম কমে যেতে পারে।

৬. বিদেশি মাছ ও মাংস:
স্যামন ও টুনার মতো বিদেশি মাছ এবং বিদেশি মাংসের ওপর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে উচ্চবিত্ত ও অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ব্যবহৃত এসব খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে।

৭. বিদেশি পোশাক ও জুতা:
পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিদেশি পোশাক ও স্যান্ডেলের ওপর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে বিলাসপণ্যের এই খাতে কিছুটা মূল্যছাড় আসতে পারে।

৮. বিদেশি প্লাস্টিক তৈজসপত্র:
বিদেশি প্লাস্টিক সামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

৯. বাটার:
বাটার আমদানিতে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, ফলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

১০. ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি, ই-বাইক:
ব্যবহারবান্ধব পরিবহন খাতের উন্নয়নে ইলেকট্রিক গাড়ি ও ই-বাইকের ওপর ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে আইসিইউসহ সব অ্যাম্বুলেন্স, ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়িতে ভ্যাট অব্যাহতির ঘোষণা এসেছে।

১১. বাস ও মাইক্রোবাস:
১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস এবং ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাসে শুল্ক-কর কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা পরিবহন খাতে দাম কমার ইঙ্গিত দেয়।

১২. টায়ার:
টায়ার উৎপাদনের কাঁচামালের শুল্ক কমানো হয়েছে, যার ফলে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কমতে পারে।

১৩. কৃষি যন্ত্রপাতি:
কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির কাঁচামালে শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে কৃষিজ খাতে ব্যয় হ্রাস পাবে।

১৪. ক্যান্সারের ওষুধ:
ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট কাঁচামালে শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা রোগীদের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে আনবে।

১৫. কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি:
কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির আমদানিতে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে সংরক্ষণ খরচ কমে কৃষিপণ্যের দামও স্থিতিশীল থাকতে পারে।

১৬. তৈজসপত্র:
পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট ও বাটি, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র এবং টেক্সটাইল গ্রেড ডেট চিপস তৈরিতে ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

১৭. পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও এলএনজি:
পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানিতে ট্যারিফ মূল্য তুলে দেওয়া এবং এলএনজির ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব জ্বালানি বাজারে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

১৮. ব্যাংকে টাকা জমা:
ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের সীমা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। এর ফলে ছোট-মাঝারি সঞ্চয়কারীদের জন্য ব্যাংকে টাকা রাখা আরও লাভজনক হবে।

বাজেট বাস্তবায়নের পটভূমি
জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বাস্তবতা পাল্টে যাওয়ায় এবারের বাজেট সংসদের বাইরে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস করা হবে এবং ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর কার্যকর হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সুফল ভোক্তা ও উৎপাদনকারী উভয় পক্ষই পেতে পারে। তবে বাস্তবে দাম কমাতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়াতে হবে।