০৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোংলায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু

  • আলী আজীম
  • Update Time : ১২:৩৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
  • ২৯৩ Time View

আলী আজীম, মোংলা।।
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত জুন থেকে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখের মধ্যেই শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জন। এর আগের মাসগুলোতে শনাক্তের হার কম হলেও চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখানে গড়ে প্রতিদিন একজন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই ডেঙ্গুর রোগীর চাপ বাড়ায় ডাক্তার ও নার্সরাও আছেন বাড়তি চাপে।
মূলত গত জুন মাস থেকেই মোংলাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই মাস থেকে ধীরে ধীরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পরবর্তীতে তা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। চলতি অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬ জন। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর সকালে ভর্তি হয়েছেন ৪জন। বর্তমানে হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন ৬জন।
আর গত রবিবার ২৭ অক্টোবর ভর্তি থাকা ৪ জনের মধ্যে ২জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে ফিরে গেছেন। চলতি মাসের এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসারত নিয়েছেন। বাকীরা মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু-কিশোর, যাদের বয়স ১১মাস, ৩, ৬, ৮, ৯, ১০, ১৫, ১৭ ও ২১ বছর। এরপর রয়েছেন মধ্য বয়সী নারীরাও।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখন অবস্থা কিছুটা ভালো। কিন্তু ভর্তি হওয়ার সময় যে অবস্থা হয়েছিল, মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না। চিকিৎসক-নার্সদের আন্তরিক সেবা আমাকে দ্রুত সুস্থ হতে সহযোগিতা করেছে।
রোগীর স্বজনরা জানান, এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেকটাই বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় তেমন তৎপরতা নেই, সরকারিভাবেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। অধিকাংশ জায়গায় দিনের পর দিন পানি জমছে। কেউ গিয়ে স্প্রে বা কোনো ওষুধও ছিটায় না। যে কারণে আশঙ্কা করছি, এবার এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা হবে।
আরেক স্বজন বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় দ্রুত এ হাসপাতালে আসি। এখন আমার রোগী আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো।
হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এখানের চিকিৎসাসেবা খুবই ভালো। ডাক্তারও নিয়মিত আসছে, নার্সরাও এসে খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে চিকিৎসাসেবা মোটামুটি ভালোই।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট নেই। তাই কারো জ্বরের বয়স তিন চার দিন হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাতে ডেঙ্গু শনাক্ত যেমন সহায়ক হবে, তেমনি কীটের অপচয় কমবে। এছাড়া মোংলাতে গতবার প্রথমবারের মতো সেল কাউন্টারের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষার কাজ শুরু করা হলেও এবার সেটা হচ্ছেনা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রোগীর সংখ্যা বাড়লে সেল কাউন্টার এর মাধ্যমে আবারও প্লাটিলেট কাউন্ট শুরু করবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: শাহীন বলেন, আমাদের পৌর এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হারটা তুলনামূলকভাবে একটু বেশী।
গত জুন থেকে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখের মধ্যেই শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জন। এর আগের মাসগুলোতে শনাক্তের হার কম হলেও চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনতার পাশাপাশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে একসাথে কাজ করে যাওয়ার আহবাণ জানিয়েছেন সরকারী এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্দোলনকারীদের সংযত থাকার আহ্বান নেপালের সেনাপ্রধানের

মোংলায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু

Update Time : ১২:৩৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

আলী আজীম, মোংলা।।
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত জুন থেকে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখের মধ্যেই শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জন। এর আগের মাসগুলোতে শনাক্তের হার কম হলেও চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখানে গড়ে প্রতিদিন একজন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই ডেঙ্গুর রোগীর চাপ বাড়ায় ডাক্তার ও নার্সরাও আছেন বাড়তি চাপে।
মূলত গত জুন মাস থেকেই মোংলাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই মাস থেকে ধীরে ধীরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পরবর্তীতে তা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। চলতি অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬ জন। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর সকালে ভর্তি হয়েছেন ৪জন। বর্তমানে হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন ৬জন।
আর গত রবিবার ২৭ অক্টোবর ভর্তি থাকা ৪ জনের মধ্যে ২জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে ফিরে গেছেন। চলতি মাসের এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসারত নিয়েছেন। বাকীরা মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু-কিশোর, যাদের বয়স ১১মাস, ৩, ৬, ৮, ৯, ১০, ১৫, ১৭ ও ২১ বছর। এরপর রয়েছেন মধ্য বয়সী নারীরাও।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখন অবস্থা কিছুটা ভালো। কিন্তু ভর্তি হওয়ার সময় যে অবস্থা হয়েছিল, মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না। চিকিৎসক-নার্সদের আন্তরিক সেবা আমাকে দ্রুত সুস্থ হতে সহযোগিতা করেছে।
রোগীর স্বজনরা জানান, এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেকটাই বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় তেমন তৎপরতা নেই, সরকারিভাবেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। অধিকাংশ জায়গায় দিনের পর দিন পানি জমছে। কেউ গিয়ে স্প্রে বা কোনো ওষুধও ছিটায় না। যে কারণে আশঙ্কা করছি, এবার এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা হবে।
আরেক স্বজন বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় দ্রুত এ হাসপাতালে আসি। এখন আমার রোগী আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো।
হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এখানের চিকিৎসাসেবা খুবই ভালো। ডাক্তারও নিয়মিত আসছে, নার্সরাও এসে খোঁজখবর নিয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে চিকিৎসাসেবা মোটামুটি ভালোই।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট নেই। তাই কারো জ্বরের বয়স তিন চার দিন হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাতে ডেঙ্গু শনাক্ত যেমন সহায়ক হবে, তেমনি কীটের অপচয় কমবে। এছাড়া মোংলাতে গতবার প্রথমবারের মতো সেল কাউন্টারের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষার কাজ শুরু করা হলেও এবার সেটা হচ্ছেনা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রোগীর সংখ্যা বাড়লে সেল কাউন্টার এর মাধ্যমে আবারও প্লাটিলেট কাউন্ট শুরু করবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: শাহীন বলেন, আমাদের পৌর এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হারটা তুলনামূলকভাবে একটু বেশী।
গত জুন থেকে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে চলতি অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখের মধ্যেই শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জন। এর আগের মাসগুলোতে শনাক্তের হার কম হলেও চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনতার পাশাপাশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে একসাথে কাজ করে যাওয়ার আহবাণ জানিয়েছেন সরকারী এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।