০৬:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় ৪ দিনে দুই প্রসূতির মৃত্যু, ক্লিনিক ঘেরাও-সিলগালা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ||
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকার নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চার দিনের ব্যবধানে দুই প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজার করার সময় একাধিক নাড়ি কাটা পড়ে রোগীদের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিনসহ কর্মরত সবাই লাপাত্তা রয়েছেন।
এদিকে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে প্রসূতির লাশ নিয়ে নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবরুদ্ধ করে রাখেন রোগীর স্বজন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লিনিকটি অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন।
এ সময় অভিযোগের সত্যতা ও ক্লিনিকে নানান অসঙ্গতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত। এ সময় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নোভা ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া দুই প্রসূতির একজন হলেন, উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের রিপন শেখের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২৫)। তিনি শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরজন নন্দলালপুর ইউনিয়নের বেলঘোড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে মর্জিনা খাতুন (২৭)। তিনি গত ১৮ আগস্ট রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক চত্বরে উপচে-পড়া ভিড়। একটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রাখা রয়েছে বৃষ্টি খাতুনের লাশ। অ্যাম্বুলেন্সের সামনে একটি ভ্যানের ওপর এক নারীর কোলে রয়েছে বৃষ্টি খাতুনের একদিন বয়সী কন্যা সন্তান। পাশেই আহাজারি করছেন স্বজনরা।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃষ্টির মা চায়না খাতুন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মেয়েকে সনো করাতে নোভা ক্লিনিকে এনেছিলাম। তখন সেখানকার ডাক্তার বলল সিজার করতে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মেয়ের সিজার করা হয়। সিজার করে একটি কন্যা সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রক্ত দেওয়ার কথা বলে বৃষ্টির সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি। রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ রাত ৩টার দিকে তড়িঘড়ি করে ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিন আমাদের একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী নিয়ে যান। সেখানে সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টি মারা যান। তাদের সঙ্গে ক্লিনিকের দু’জন নার্সও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে ডাক্তাররা। আমি সঠিক বিচার চাই। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি করতে পারে ওরা।’
বৃষ্টির বাবা সাইফুল শেখ বলেন, ‘ভুয়া ডাক্তার দিয়ে ক্লিনিকের মালিক আমার মেয়েকে সিজার করিয়েছে। সিজারের সময় একাধিক নাড়ি কেটে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লিনিকের একজন কর্মচারী বলেন, ‘১৮ আগস্টের রোগীর মতো এই রোগীরও (বৃষ্টি) নাড়ি কেটে যায়। দু’জনই রাজশাহীতে মারা যান।’
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন জানান, মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দুইজন প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো যাবে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত জানান, অল্প সময়ে দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ এবং নানান অসঙ্গতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় আসেননি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার (ওসি) আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আন্দোলনকারীদের সংযত থাকার আহ্বান নেপালের সেনাপ্রধানের

কুষ্টিয়ায় ৪ দিনে দুই প্রসূতির মৃত্যু, ক্লিনিক ঘেরাও-সিলগালা

Update Time : ০৯:৪৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ||
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকার নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চার দিনের ব্যবধানে দুই প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজার করার সময় একাধিক নাড়ি কাটা পড়ে রোগীদের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিনসহ কর্মরত সবাই লাপাত্তা রয়েছেন।
এদিকে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে প্রসূতির লাশ নিয়ে নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবরুদ্ধ করে রাখেন রোগীর স্বজন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লিনিকটি অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন।
এ সময় অভিযোগের সত্যতা ও ক্লিনিকে নানান অসঙ্গতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত। এ সময় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নোভা ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া দুই প্রসূতির একজন হলেন, উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের রিপন শেখের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২৫)। তিনি শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরজন নন্দলালপুর ইউনিয়নের বেলঘোড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে মর্জিনা খাতুন (২৭)। তিনি গত ১৮ আগস্ট রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক চত্বরে উপচে-পড়া ভিড়। একটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রাখা রয়েছে বৃষ্টি খাতুনের লাশ। অ্যাম্বুলেন্সের সামনে একটি ভ্যানের ওপর এক নারীর কোলে রয়েছে বৃষ্টি খাতুনের একদিন বয়সী কন্যা সন্তান। পাশেই আহাজারি করছেন স্বজনরা।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃষ্টির মা চায়না খাতুন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মেয়েকে সনো করাতে নোভা ক্লিনিকে এনেছিলাম। তখন সেখানকার ডাক্তার বলল সিজার করতে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মেয়ের সিজার করা হয়। সিজার করে একটি কন্যা সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রক্ত দেওয়ার কথা বলে বৃষ্টির সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি। রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ রাত ৩টার দিকে তড়িঘড়ি করে ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিন আমাদের একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী নিয়ে যান। সেখানে সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টি মারা যান। তাদের সঙ্গে ক্লিনিকের দু’জন নার্সও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে ডাক্তাররা। আমি সঠিক বিচার চাই। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি করতে পারে ওরা।’
বৃষ্টির বাবা সাইফুল শেখ বলেন, ‘ভুয়া ডাক্তার দিয়ে ক্লিনিকের মালিক আমার মেয়েকে সিজার করিয়েছে। সিজারের সময় একাধিক নাড়ি কেটে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্লিনিকের একজন কর্মচারী বলেন, ‘১৮ আগস্টের রোগীর মতো এই রোগীরও (বৃষ্টি) নাড়ি কেটে যায়। দু’জনই রাজশাহীতে মারা যান।’
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন জানান, মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দুইজন প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো যাবে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত জানান, অল্প সময়ে দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ এবং নানান অসঙ্গতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় আসেননি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার (ওসি) আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’